ভূলইন উত্তর ইউনিয়ন এর কৃত্তিম প্রজনন কেন্দ্র
নাম | মোবাইল |
মো: নুরুল আমিন | 0187983186 |
কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের তথ্য সমূহ...
গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজনন নিঃসন্দেহ দেশ ও জাতির জন্য উন্নয়নমূলক এক আধুনিক কার্যক্রম। কোন ঝামেলা ছাড়া অভিজ্ঞ পশুচিকিৎসক দিয়ে কৃত্রিম প্রজননের কাজ করাতে হবে। প্রতি উপজেলাতে পশুসম্পদ উন্নয়নে সরকার একজন করে পশুচিকিৎসক নিয়োগ করেছেন। গরিব কৃষকসহ ওই এলাকার জনসাধরণ নানাবিধ পশু সমস্যার সমাধান পেয়ে থাকেন তাদের কাছ থেকে। এছাড়া বাংলাদেশ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকেও পশুপালন ও তার রোগবালাইয়ের চিকিৎসার জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এক কথায় কৃত্রিম প্রজননে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য উন্নত ষাঁড়ের শুক্রাণু ব্যবহার ও সুস্থ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করতে পারলে বছরে বাচ্চা উৎপাদন দু'লক্ষেরও বেশি পাওয়া সম্ভব। বাকৃবি এ ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য পেয়েছে। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপকহারে এ প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে শিগগিরই ডেইরি শিল্প কাঙ্খিত স্বপ্নে পৌছাতে পারবে।
সাধারণত ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট কয়েকটি পদ্ধতির মাধ্যমে গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে। একটি ষাঁড়ের বীজ থেকে প্রতি বছর ৬০ থেকে ৮০টি গাভীর প্রজনন করানো সম্ভব। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ গাভী প্রজনন করানো যায়। স্বাভাবিকভাবে একটি ষাঁড়ের সর্বমোট ৭০০ থেকে ৯০০টি বাছুর প্রসবে ভূমিকা রাখতে পারে। কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অনেকাংশে সংক্রামক ব্যাধি রোধ করা যায় এবং গাভী ষাঁড়ের দ্বারা আঘাত প্রাপ্ত হয় না।
আমাদের দেশে ষাঁড়ের বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন বা সংস্থাপনে অজ্ঞতার কারণে অনেক সময় গাভীর উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। কৃত্রিম প্রজনন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত না হলে ভালর চেয়ে খারাপই হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের অভাব, অসাবধানতা, জ্ঞাত বা অজ্ঞাতসারে প্রক্রিয়াগত ত্রুটি-বিচ্যুতি এর জন্য দায়ী।
বর্তমানে গ্রামাঞ্চলে ষাঁড়ের অভাব থাকায় কৃত্রিম প্রজনন জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু কৃত্রিম প্রজননে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পদ্ধতিগত ত্রুটি-বিচ্যুতি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অসাবধানতা ও অনভিজ্ঞতার কারণে নানা সমস্যার সন্মুখিন হতে হয়। কৃত্রিম প্রজননের ভাল দিক যেমন আছে তেমন এর খারাপ দিকও কিছু আছে। বাস্তবে দেখা যায় স্বাভাবিক প্রজনন অপেক্ষা কৃত্রিম প্রজননে গর্ভ সঞ্চারের হার বেশ কম, বার বার গর্ভধারণ করাতে খরচও হয় বেশি। রোগাক্রান্ত ষাঁড়ের বীজ গাভীর প্রজনন অঙ্গে স্থাপন করা হলে পরবর্তীতে দেখা যায় নানাবিধ সমস্যা। যার প্রভাব পরবর্তী বংশবিস্তারের উপর বর্তায়। এ ছাড়া অনেক গাভী বার বার গরম হয়ে থাকে। এক নিরীক্ষায় দেখা গেছে একটি গাভী গর্ভ সঞ্চারের জন্য গড়ে ১৩ বার পর্যন্ত প্রজননের প্রয়োজন হতে পারে।
রাসায়নিক দ্রব্য, ধূলিকণা, মাত্রারিক্ত তাপমাত্রার সংস্পর্শে খুব সহজেই ষাঁড়ের বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আবার যে সমস্ত জিনিস পত্রের সংস্পর্শে বীজ আসে তাতে রাসায়নিক পদার্থ থাকলেও বীজ নষ্ট হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বীজ তরল হলে কিংবা প্রজনন অঙ্গের বাইরে স্থাপন করা হলেও গাভী গর্ভধারণ করতে পারে না। ডিম্বাণু নির্গমনের আগে অথবা নির্গমনের পরে বীজ স্থাপন করলে গাভীর উর্বরতা হ্রাস পায়। তাই প্রথমবার বীজ স্থাপনের পর অন্তত ৬ ঘন্টা পর দ্বিতীয়বার বীজ স্থাপন করলে সুফল পাওয়া যায় বেশি। বীজ স্থাপনের সময় প্রজনন অঙ্গ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হলে গাভীর নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। যেমন ব্রুসেলেসিস, ভিব্রিওসিস, ট্রাইকোমনোসিসসহ বিভিন্ন বংশগত রোগের সন্মুখিন হতে হয়। এ জন্য কোন সমস্যা দেখা দিলে পশুচিকিৎকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সরকার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে যা পশুসম্পদ উন্নয়নে সহায়তা করবে।
গাভী গর্ভবতী কিনা, নিয়মিত গরম হয় কিনা তা নির্ণয় করা, উন্নত ও উর্বর ষাঁড় নির্বাচন করা, গাভীর গর্ভধারনের ক্ষমতা নির্ণয় করা, গর্ভধারনের হার বৃদ্ধি করা, গাভীর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং ভেটেরিনারিয়ানের সাহায্যে গাভীর নিয়মিত পরিচর্যা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার দিয়ে করতে হবে।
কৃত্রিম প্রজননের জন্য ইতোমধ্যে খামারিদের সংগঠিত করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে। খামারিদের উৎপাদনমুখী সেবা ও প্রশিক্ষণ চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই গরুর ব্যাপকহারে কৃত্রিম প্রজনন শুরু করা হবে বলে আশা করছে তারা। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে দুটি সমিতি ইতোমধ্যে নিবন্ধিত হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে কৃত্রিম প্রজননের সফলতা বাংলাদেশের প্রতি ঘরে ঘরে পৌছে যাবে এবং দুধ উৎপাদনসহ গরুর সংখ্যা অধিকহারে বৃদ্ধি পাবে।
লেখক: মোঃ নূর আলী, পশু চিকিৎসক, ঝিনাইদহ
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য তথা আমিষের চাহিদা পূরণে ও বেকারত্ব দূরীকরণে ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল পালন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল দ্রুত বর্ধনশীল। এই জাতের ছাগল বছরে দু’বার বাচ্চা দেয়। ফলে ছাগলের প্রজননের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এরই ফলে ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের কৃত্রিম প্রজননে সফল হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশু পালন অনুষদের পশুবিজ্ঞানীরা।
একটি ছাগীকে প্রাকৃতিক নিয়মে পাঁঠা দ্বারা প্রজনন করালে একবারে যে পরিমাণ বীজ ব্যবহৃত হয়, একই পরিমাণ বীজ দ্বারা হিমায়িত কৃত্রিম প্রজনন প্রযুক্তির সাহায্যে ২৫ থেকে ৩০ ছাগীকে প্রজনন করানো যায়। এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ফল পাওয়া যায় প্রাকৃতিক প্রজনন থেকে ২৫ থেকে ৩০ গুণ বেশি। এই হিমায়িত বীজ ব্যবহার বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতের ছাগল রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন পশুবিজ্ঞানীরা।
প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. এমএএম ইয়াহিয়া খন্দকার আশা করছেন, বিলুপ্তিপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও কাজে লাগানো যাবে। ইউএসডিএ’র অর্থায়নে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ব্ল্যাক বেঙ্গলের কৃত্রিম প্রজননে গত দুই বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে আসছে পশুপালন অনুষদের পশু প্রজনন ও কৌলি বিজ্ঞান বিভাগ। বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াহিয়া খন্দকার প্রকল্পটির পরিচালক এবং পশুপালন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন বিকল্প পরিচালক হিসেবে গবেষণা পরিচালনা করছেন। ব্ল্যাক বেঙ্গলকে পৃথিবীর সেরা জাতের ছাগল হিসেবে অভিহিত করা হলেও আন্তঃপ্রজনন ও অন্যান্য অবৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার কারণে ছাগলের এ দেশি জাতটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। এ উপলব্ধি থেকে ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাকৃবিতে কৃত্রিম প্রজননের এ প্রকল্পটি শুরু হয়।
গবেষক জানান, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১৭টি সুস্থ-সবল পাঁঠা এবং শতাধিক ছাগী সংগ্রহ করার মাধ্যমে শুরু হয় তাদের গবেষণা। গবেষণা ফিল্ডে সংগ্রহকৃত পাঁঠার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে উন্নতজাতটি বাছাই করা হয়। বাছাইকৃত পাঁঠার বীজের গুণাগুণ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করা হয়। বীজ প্রত্যাশিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন হলে তা হিমায়িত করে এআইগানের মাধ্যমে ছাগীকে কৃত্রিম প্রজনন করিয়ে উন্নতজাতের পাঁঠা উত্পাদন করা হয়। এভাবে প্রকল্পটির মাধ্যমে দ্রুত ব্ল্যাক বেঙ্গলের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। তিনি আরও জানান, প্রাকৃতিক নিয়মে একটি পাঁঠার সঙ্গে একটি ছাগীর প্রজননের সময় ছাগী যে পরিমাণ বীজ গ্রহণ করে তার মাত্র কয়েক শতাংশ কাজে লাগে, বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু হিমায়িত বীজ দ্বারা কৃত্রিম প্রজননে ওই পরিমাণ বীজ বেশক’টি ভাগে ভাগ করা হয়, যা ২০ থেকে ২৫টি ছাগী গ্রহণ করতে পারে। যার ফলে সমপরিমাণ বীজ দ্বারা ২০ থেকে ২৫ গুণ বেশি ফল পাওয়া যায়। এখন পর্যন্ত গবেষণায় দেখা গেছে, এই হিমায়িত বীজের দ্বারা কৃত্রিম প্রজননে ছাগীর বাচ্চা ধারণ ক্ষমতা ৫০ শতাংশের বেশি, যা গাভীর বাচ্চা ধারণ ক্ষমতার প্রায় সমান। এসব হিমায়িত বীজকে তরল নাইট্রোজেনের মাধ্যমে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় এসব হিমায়িত বীজের গুণাগুণ ৫০ বছর অটুট থাকবে, যা ভবিষ্যতে ছাগলের কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহার করা যাবে। গবেষকরা আশা করছেন, বিলুপ্তপ্রায় ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এ গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এ প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় এটি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যেও কাজে লাগানো যাবে।
ভরণপোষণে অল্প খরচ, একসঙ্গে কয়েকটি বাচ্চা দেয়ার ক্ষমতা, সাধারণ রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ও দ্রুত বর্ধনশীল বলে এ জাতটি দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের হাতিয়ার হতে পারে। বিশেষ করে বাকৃবির বর্তমান এই গবেষণার ফল মাঠপর্যায়ে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে পারলে দারিদ্র্য বিমোচনসহ পশু পুষ্টির চাহিদা মেটানো ও বেকার সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করে মাঠপর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পশুপালন গবেষক ও সংশ্লিষ্ট বিভাগকে আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
গরু মোটাজাতকরণ প্রকল্প
প্রতিটি পরিবার কিংবা ব্যক্তির একক বা একমুখী রোজগারে সংসার চালানো অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই অনেকেই বাড়তি একটা কিছু করতে চায়, কিন্তু সুযোগ হয় না কিংবা হলেও কি করবে, তা খুঁজে পায় না।
মোটাজাতকরণের জন্য গরু কিনতে গিয়ে কয়েকটি দিক খেয়াল রাখতে হবে, যেমন:
১) ১ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে গরু কিনতে হবে (১২-১৫ মাস বয়সের গরু মোটাজাতকরনের জন্য ভালো)
২) গায়ের চামড়া ঠিলা-পাতলা, পাঁচরের হাড় চেপ্টা, পায়ের মোট এবং শুধু মাত্র খাবারের অভাবে যে সব গরু শুকিয়ে গেছে এমন গরু কম মূল্যে কিনতে হবে।
৩) মনে রাখতে হবে গর্ভবতী গাভীকে ইউরিয়া মিশ্রিত খড় খাওয়ানো যাবে না। নির্বাচিত গরুকে প্রকল্প মতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া মিশ্রিত খড় খাওয়ানোর পূর্বে কিছু চিকিৎসা দিয়ে উপকুক্ত করে নিতে হবে।
ক. গরুর শরীরে কোনো ক্ষত থাকলে সে স্থানে ডেটল বা স্যাভলন দিয়ে ধুয়ে পরিস্কার করে নেগোভোন মলম লাগিয়ে প্রয়োজনে ব্যাণ্ডেজ করে রাখতে হবে, যাতে ক্ষত স্থানে মশা-মাছি কিংবা ময়লা জমতে না পারে।
খ. ক্ষত গভীর হলে তা না শুকানো পর্যন্ত আবার পরিস্কার করে মাঝে মধ্যেই মলম ব্যবহার করতে হবে।
গ. ক্ষত সেরে যাওয়ার পর গরুর গায়ের সেসব পরজীবী যেমন-উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদি মুক্ত করতে হবে।
নিয়মাবলীঃ
একটি গরুর জন্য নিউসিডল বা এনোসটোল পাউডার ১০ কেজি পানিতে ২.৫ চা চামচ মিশাতে হবে। তারপর বাসতি থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায় নিয়ে প্রথমে ভালোভাবে নাক-মুখ বেঁধে কান, চোখ, মুখ ছাড়া শরীরের সর্বত্র ওষুধ মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে কানের ভেতর, চোখের চতুপারর্শ্বে, নাক, মুখ লেজের গোড়া, শরীরের সঙ্গে পায়ের সংযোগস্থলসহ সকল সংকীর্ণ জায়গায় লাগাতে হবে। ওধুষ লাগিয়ে ২০-২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিস্কার পানি দ্বারা শরীরের সর্বত্র ভালোভাবে ধুয়ে ওষুধমুক্ত করতে হবে। ওষুধ লাগানোর ২/১ দিন পর যদি দেখা যায় ভালোভাবে বাহিত্যক পরজীবী মুক্ত হয়নি তবে ১৫ দিন পরে আবার একই নিয়মে ওষুধ লাগাতে হবে।
সর্তকতা
১. যে ব্যক্তি ঔষুধ লাগাবেন, তিনি গরুর শরীরের ক্ষতস্থান সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, কারণ এই ঔষুধ বিষ জাতীয়।
২. গরুর শরীরে ক্ষতস্থানকে (যদি ভালোভাবে না শুকিয়ে তাকে) এড়িয়ে ঔষদ প্রয়োগ করতে হবে।
৩. গরুকে ঔষুধ প্রয়োগের পর ভালোভাবে গোসল করিয়ে উক্ত স্থান থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে মুখের বাঁধন খুলতে হবে কারণ গরু স্বভাবত ঔষুধ লাগা ঘাস বা পানি খেয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
অভ্যন্তরীণ পরজীবী মুক্ত করণ
১. গোল কৃমি
২. কলিজা বা পাতা কৃমি।
গোল কৃমি
গোল কৃমি মুক্ত করতে নিচের যে কোন একটি ঔষুধ ব্যবহার করা যায়
মেনাফেঙ্ পাউডার = ১ প্যাকেট ১টি গরুর জন্য
অথবা নেমাফেক্স বড়ি = ৩টি বড়ি একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুর জন্য = ২টি বড়ি মাঝারি ও ছোট বাছুরের জন্য
অথবা কোপেন পাউডার = ১টি প্যাকেট একটি গরুর জন্য
অথবা রিনটাল পাউডার = ৭.৫ মি গ্রাম প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য
বিঃদ্রঃ রিনটাল পাউডার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভাল কারণ এই ঔষুধে ছোট বড় মাঝারি সব ধরনের কৃমি মারা যায়। গোল কৃমির ঔষুধ খাওয়ানোর পরে সবল গরু ৩ দিন এবং অন্যান্য গরুর ক্ষেত্রে ৭দিন অপেক্ষা করে তবে পাতা কৃমির ঔষুধ প্রয়োগ করতে হবে।
২. কলিজা বা পাতা কৃমি মুক্তকরণের নিয়মাবলী
চামড়ার নিচে টোডাক্স ইনজেকশন করতে হবে। মাত্রা সাধারণভাবে ২/৩ সিসি প্রাপ্তবয়স্ক গরুর জন্য। মোটাতাজা করতে হলে ঙ্গ সিসি পরিমান ইনজেকশন করতে হয়। এই ঔষুধ প্রয়োগের ৩ দন অপেক্ষা করার পরে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার খাওয়ানো আরম্ভ করতে হবে। টোডাঙ্ ইনজেকশন ৭ দিন পর পর ২ বার দিতে হবে এবং তখন খাবার বন্ধ করার কোনো প্রয়োজন নাই। গরুকে প্রদানের জন্য দানাদার খাদ্যের মিশ্রণ তৈরির নিয়মঃ
১. নং মিশ্রণ
ক. তিলের খৈল = ৪ কেজি
খ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
গ. গমের ভূষি = ৪ কেজি
ঘ. যে কোন ডালের ভূষি = ৪ কেজি
২নং মিশ্রণ
ক. গম ভাঙ্গা =৪কেজি
খ. তিলের খৈল = ৪ কেজি
গ. চালের কুঁড়া = ৪ কেজি
ঘ. ডাল ভাঙ্গা, খেসারি = ৪ কেজি
কৃমি দূর করার পরে গরুকে ইউরিয়া মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।
গরুকে সাধারণত তিনটি পদ্ধতিতে মিশ্রিত উন্নত খাবার দিতে হবে।
১। আঁশ জাতীয় খড় খাদ্যের সাথে মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে
২। দানাদার জাতীয় খাদ্যের সাথে সরাসরিভাবে এবং
৩। ইউরিয়া মোলাসেস বুকের মাধ্যমে
খড়ের সাথে মিশিয়ে ইউরিয়া খাওয়ানোর নিয়ম
খড় প্রক্রিয়াজাতকরণ ১০ কেজি খড় ১০ কেজি পানি এবং ৫০০ গ্রাম ইউরিয়া বায়ুরোধী বড় বাঁশের ডোল (পাত্রবিশেষ) বা ইটের তৈরি হাউজে ৭-১০ দিন আবদ্ধ বায়ুরোধী অবস্থায় রেখে দিতে হবে।
তারপর ঐ খড় বের করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে যেন ইউরিয়া তীব্র গন্ধ কিছুটা কমে আসে। এই খড় গরু প্রথমে না খেলে কিছুটা চিড়াগুড় মিশিয়ে দেয়া যেতে পারে (২০০-৫০০ গ্রাম) গরুকে প্রথমে দৈনিক ৫ গ্রাম থেকে শুরু করে সবের্াচ্চ ৫০-৬০ গ্রাম ইউরিয়া খাওয়ানো যায়। ছোট গরুর ক্ষেত্রে ৩০-৪০ গ্রামের বেশী দৈনিক খাওয়ানো উচিত নয়।
দানাদার খাদ্যে ইউরিয়া ব্যবহার করে বিভিন্ন ওজনের গবাদি পশুর দৈনিক খাদ্যের তালিকা।
১০০ কেজি দৈহিক ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা।
ধানের খড় = ২ কেজি
সবুজ ঘাস = ২ কেজি (ঘাস না থাকলে খড় ব্যবহার করতে হবে
দানদার খাদ্যে মিশ্রন = ১.২-২.৫ কেজি
ইউরিয়া = ৩৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
চিটাগুড়া = ২০০-৪০০ গ্রাম
লবণ = ২৫ গ্রাম
দানাদার খাদ্যের সাথে লবন, ইউরিয়া, চিটাগুড় এক সাথে মিশিয়ে দিনে ২ বার দিতে হবে। ধানের খড় এবং কাঁচা ঘাস ছোট ছোট করে কেটে এক সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
১৫০ কেজি ওজনের গবাদিপশুর খাদ্য তালিকা
খড় = ৩ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুয়ায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম
১৫০-২০০ কেজি ওজনের পশুর খাদ্য তালিকা
ধানের খড় = ৪ কেজি
কাঁচা ঘাস = ৫-৬ কেজি
দানাদার খাদ্যের মিশ্রন = ১.৫-২ কেজি
চিটাগুড় = ৫০০ গ্রাম
ইউরিয়া = ৪৫ গ্রাম (নিয়মানুযায়ী)
লবন = ৩৫ গ্রাম
মোটাতাজা করনের গরুকে সর্বক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ জাতীয় খাবার (খড়, কাঁচা ঘাস) এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। গবাদীপশুকে ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার প্রদানে কিছু কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা উচিত।
১। এক বছরের নিচে গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
২। কখনও মাত্রাতিরিক্ত ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না
৩। গর্ভাবস্থায় ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।
৪। অসুস্থ গরুকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না, তবে দূর্বল গরুকে পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়ানো যেতে পারে।
৫। ইউরিয়া খাওয়ানোর প্রাথমিক অবস্থা (৭ দিন পর্যন্ত পশুকে ঠান্ডা ছায়াযুক্ত স্থানে বেঁধে রাখতে হবে এবং ঠান্ডা পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। প্রকল্প মেয়াদ তিন মাস, শুরু হবে ইউরিয়া মিশ্রিত খাবার প্রদানের দিন থেকে।
এই খবার খাওয়ানো শুরুর ১০-১৫ দিন পর হেমাটোপিন বিএস (১০এমএল) ইনজেকশন মাংসপেশীতে প্রয়োগ করলে মোটাতাজা করণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়।
উল্লেখিত তিনটি পদ্ধতির মধ্যে খড়ের প্রক্রিয়াজাত করে ইউরিয়া খাওয়ানো সহজ, ব্যয় কম এবং ফল ভালো আসে। এই প্রকল্পগুলো বিভিন্ন বয়সী হতে পারে। যেমন ৩ বা ৪ মাস মেয়াদি। নির্ভর করছে খামারি কেনা গরুটি কি রকম মোটা করে কি দামে বিক্রি করবেন। দাম বেশি চাইলে প্রকল্প মেয়াদ দীর্ঘ হবে এবং কম চাইরে প্রকল্প মেয়াদ স্বল্প হবে। তবে অনেকেই ঈদের বাজারকে চিন্তা করে তার ৪/৫ মাস আগে থেকে প্রকল্প শুরু করেন।
তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীত
বাংলাদেশে কোরবানির মূল উপাদান হচ্ছে গরু। আর সেটা যদি হয় মোটাতাজা, নাদুস-নুদুস তবে আনন্দের সীমা থাকে না। এ উপলক্ষকে সামনে রেখে যারা গরু মোটাতাজাকরণে আগ্রহী তাদের আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া দরকার। এজন্য দরকার গরু মোটাতাজাকরণে সঠিক ব্যবস্থাপনা। এটি কখন ও কিভাবে করলে বেশি লাভবান হওয়া যায় তার বৈজ্ঞানিক ও আধুনিক পদ্ধতি নিম্নে দেয়া হলো-
অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২-৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে আখ্যায়িত করা হয়। এটির গুরুত্ব হচ্ছে- দরিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণিজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য থেকে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা।
গরু মোটাতাজাকরণের আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশু পালন অনুষদের পশু বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মুজাফফর হোসেন জানান-
প্রয়োজনীয় উপাদান, পদ্ধতি ও মোটাতাজাকরণের সঠিক সময় : বয়সের ওপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৪-৬ মাসও লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার ওপর ভিত্তি করে কোরবানি ঈদের কিছুদিন আগ থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।
স্থান নির্বাচন : খামার স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে। হ খোলামেলা ও প্রচুর আলো-বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে। খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে। পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে। সুষ্ঠু নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেমন- পানি, মলমূত্র, আবর্জনা ইত্যাদি। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে সম্প্রসারণের সুযোগ থাকতে হবে।
গরু নির্বাচন : উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অধিক লাভজনক। ২-২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভালো। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সঙ্গে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভিজা ভিজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাঁজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাঁড়া সোজা হতে হবে।
বাসস্থানের গঠন : গরুর বাসস্থান তৈরির জন্য খোলামেলা উঁচু জায়গায় গরুর ঘর তৈরি, একটি গরুর জন্য মাপ হতে হবে কমপক্ষে ১০-১২ বর্গফুট। ভিটায় ১ ফুট মাটি উঁচু করে এর ওপর ১ ফুট বালু দিয়ে ইট বিছিয়ে মেঝে মসৃণ করার জন্য সিমেন্ট, বালু ও ইটের গুঁড়া দিতে হবে। গরুর সামনের দিকে চাড়ি এবং পেছনের দিকে বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য নালা তৈরি করতে হবে। বাঁশের খুঁটি দিয়ে বেঁধে ওপরে ধারি অথবা খড় ও পলিথিন দিয়ে চালা দিতে হবে, ঘরের পাশে নিরাপদ পানির ব্যবস্থা করা দরকার। পাশাপাশি দাঁড়ানো গরুকে বাঁশ দিয়ে আলাদা করতে হবে যাতে একে অন্যকে গুঁতা মারতে না পারে। ঘরের চারপাশ চটের পর্দার ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাতে অতি বৃষ্টি ও অতি ঠান্ডার সময় ব্যবহার করা যায়।
খাদ্য : খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে খরচ কমানো সম্ভব। এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেয়া হলো-
শুকনা খড় : ২ বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনা খড় ২-৩ ইঞ্চি করে কেটে এক রাত লালীগুড়-চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানিঃচিটাগুড়=২০:১।
কাঁচা ঘাস : প্রতিদিন ৬-৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্য জাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কলাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
দানাদার খাদ্য : প্রতিদিন কমপক্ষে ১-২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যের তালিকা দেয়া হলো-
গম ভাঙা-গমের ভুসি ৪০ কেজি চালের কুঁড়া ২৩.৫ কেজি খেসারি বা যে কোনো ডালের ভুসি ১৫ কেজি তিলের খৈল-সরিষার খৈল ২০ কেজি লবণ ১.৫ কেজি।
উল্লিখিত তালিকা ছাড়াও বাজারে প্রাপ্ত ভিটামিন মিনারেল মিশ্রণ ১% হারে খাওয়াতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস বক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভুসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।
রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা : প্র্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে। গোশালা ও পার্শ¦বর্তী স্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে। বাসস্থান সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে। রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে। খাবার পাত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে। পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাজারজাতকরণ : মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভালো মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজার মূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয় মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয় মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত কোরবানির ঈদের সময় গরুর মূল্য অত্যধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময়। স্বল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়ার সহজ এবং সুবিধাজনক উপায়ের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ একটি অত্যন্ত যুগোপযোগী পদ্ধতি।
কিন্তু প্রচলিত এবং অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণের তুলনায় আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ অধিক লাভজনক। সুতরাং কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে আমাদের দেশের কৃষকরা যদি ওই পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করতে পারে তাহলে প্রতি বছর কোরবানি ঈদের সময় গরু আমদানি কমানো সম্ভব হবে এবং এর ফলে দেশ আর্থিকভাবে বিরাট সফলতা লাভ করতে সক্ষম হবে।
লেখক: মো. শাহীন আলম
কোনোভাবেই ইনজেকশন বা কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার করে গবাদিপশু মোটাতাজাকরণের উদ্যোগ নেওয়া যাবে না। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার ছাড়াও স্বাভাবিক ও জৈব পদ্ধতিতেই গরু মোটাতাজাকরণ সম্ভব। এজন্য দরকার শুধু কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা।
কোনো গ্রোথ হরমোন ব্যবহার ছাড়াই যেভাবে গবাদিপশুর বেশি মাংস নিশ্চিত করা যায়, সে সম্পর্কে কিছু পদ্ধতি স্বল্প পরিসরে আলোকপাত করা হল: অধিক মাংস উৎপাদনের জন্য ২ থেকে ৩ বছর বয়সের শীর্ণকায় গরুকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় খাদ্য সরবরাহ করে হৃষ্টপুষ্ট গরুতে রূপান্তরিত করাকে গরু মোটাতাজাকরণ বলে। এটির গুরুত্ব হচ্ছে- দারিদ্রতা হ্রাসকরণ, অল্প সময়ে কম পুঁজিতে অধিক মুনাফা অর্জন, অল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মূলধন ফেরত পাওয়া, প্রাণীজ আমিষের ঘাটতি পূরণ, স্বল্পমেয়াদি প্রযুক্তি হওয়ার কারণে পশু মৃত্যুর হার কম, কৃষিকার্য হতে উৎপাদিত উপজাত পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে সহজেই মাংস উৎপাদন করা, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে আয় বৃদ্ধি করা প্রভৃতি।
মোটাতাজাকরণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান পদ্ধতি: মোটাতাজাকরণের সঠিক সময়: বয়সের উপর ভিত্তি করে সাধারণত ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ করা যায়। অনেক সময় ৫ থেকে ৬ মাসও সময় লাগতে পারে। গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সুবিধাজনক সময় হচ্ছে বর্ষা এবং শরৎকাল যখন প্রচুর পরিমাণ কাঁচাঘাস পাওয়া যায়। চাহিদার উপর ভিত্তি করে কোরবানী ঈদের ৫ থেকে ৬ মাস পূর্ব থেকে গরুকে উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে মোটাতাজাকরণ লাভজনক।
স্থান নির্বাচন: গরু রাখার স্থান নির্বাচনে নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে: ১. শুষ্ক ও উঁচু জায়গা হতে হবে, যাতে খামার প্রাঙ্গণে পানি না জমে থাকে
২. খোলামেলা ও প্রচুর আলো বাতাসের সুযোগ থাকতে হবে।
৩.খামারে কাঁচামাল সরবরাহ ও উৎপাদিত দ্রব্যাদি বাজারজাতকরণের জন্য যোগাযোগ সুবিধা থাকতে হবে
৪. পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহের সুষ্ঠু ব্যবস্থা থাকতে হবে;
৫. সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। গরু নির্বাচন: উন্নত দেশের মাংসের গরুর বিশেষ জাত রয়েছে। বিদেশি গরুর জন্য উন্নত খাদ্য ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন। তাই দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণ অলাভজনক। ২ থেকে ২.৫ বছরের গরুর শারীরিক বৃদ্ধি ও গঠন মোটাতাজাকরণের জন্য বেশি ভাল। এঁড়ে বাছুরের দৈহিক বৃদ্ধির হার বকনা বাছুরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে। তবে বাছুরের বুক চওড়া ও ভরাট, পেট চ্যাপ্টা ও বুকের সাথে সমান্তরাল, মাথা ছোট ও কপাল প্রশস্ত, চোখ উজ্জ্বল ও ভেজা ভেজা, পা খাটো প্রকৃতির ও হাড়ের জোড়াগুলো স্ফীত, পাজর প্রশস্ত ও বিস্তৃত, শিরদাড়া সোজা হতে হবে। গরুর খাদ্যের ধরণ: খাদ্যে মোট খরচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ ভাগ ব্যয় হয়। তাই স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত খাদ্য দ্বারা খরচ কমানো সম্ভব।
এজন্য গরু মোটাতাজাকরণের একটি সুষম খাদ্য তালিকা নিচে দেওয়া হল: ক) শুকনো খড়: দুই বছরের গরুর জন্য দৈহিক ওজনের শতকরা ৩ ভাগ এবং এর অধিক বয়সের গরুর জন্য শতকরা ২ ভাগ শুকনো খড় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি করে কেটে একরাত লালীগুড়/চিটাগুড় মিশ্রিত পানিতে ভিজিয়ে প্রতিদিন সরবরাহ করতে হবে। পানি: চিটাগুড় = ২০ : ১।
খ) কাঁচাঘাস: প্রতিদিন ৬ থেকে ৮ কেজি তাজা ঘাস বা শস্যজাতীয় তাজা উদ্ভিদের উপজাত দ্রব্য যেমন- নেপিয়ার, পারা, জার্মান, দেশজ মাটি কালাই, খেসারি, দুর্বা ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
গ) দানাদার খাদ্য: প্রতিদিন কমপক্ষে ১ থেকে ২ কেজি দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
নিচে ১০০ কেজি দানাদার খাদ্যে তালিকা দেওয়া হল: ১. গম ভাঙা/গমের ভূসি-৪০ কেজি;
২. চালের কুঁড়া-২৩.৫ কেজি;
৩. খেসারি বা যেকোনো ডালের ভূসি-১৫ কেজি:
৪. তিলের খৈল/সরিষার খৈল-২০ কেজি; লবণ-১.৫ কেজি।
তাছাড়াও বিভিন্ন রকমের ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি হচ্ছে ৩৯ ভাগ চিটাগুড়, ২০ ভাগ গমের ভূসি, ২০ ভাগ ধানের কুঁড়া, ১০ ভাগ ইউরিয়া, ৬ ভাগ চুন ও ৫ ভাগ লবণের মিশ্রণ।
রোগ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা: ক. প্রতিদিন নিয়মিতভাবে পশুর গা ধোয়াতে হবে;
খ. গো-শালা ও পার্শ্ববর্তী স্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে:
গ. নিয়মিতভাবে গরুকে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়াতে হবে;
ঘ. বাসস্থান সর্বদা পরিস্কার রাখতে হবে।
ঙ. স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পরিমিত পরিমাণে পানি ও সুষম খাদ্য প্রদান করতে হবে।
চ. রোগাক্রান্ত পশুকে অবশ্যই পৃথক করে রাখতে হবে।
ছ. খাবার পাত্র পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
জ. খামারের সার্বিক জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে হবে।
ঝ. পশু জটিল রোগে আক্রান্ত হলে পশুচিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
বাজারজাতকরণ: মোটাতাজাকরণ গরু লাভজনকভাবে সঠিক সময়ে ভাল মূল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাগ্রহণ হচ্ছে আরেকটি উল্লেখ্যযোগ্য বিষয়। বাংলাদেশে মাংসের জন্য বিক্রয়যোগ্য গবাদিপশুর বাজারমূল্যেও মৌসুমভিত্তিক হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে। কাজেই একজন প্রতিপালককে গরু মোটাতাজাকরণের জন্য অবশ্যই গরুর ক্রয়মূল্য যখন কম থাকে তখন গরু ক্রয় করে বিক্রয়মূল্যের উর্ধ্বগতির সময়ে বিক্রয়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। সাধারণত কোরবানীর ঈদের সময়ে গরুর মূল্য অত্যাধিক থাকে এবং এর পরের মাসেই বাজার দর হ্রাস পায়। তাই এখন গরু মোটাতাজাকরণের উপযুক্ত সময় এবং কোরবানীর সময় তা বিক্রি করে দেওয়া ভাল।
লেখক: আব্দুস সালাম সাগর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ